ই-কমার্স-এর ইতিহাস

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - ই-বিজনেস ই-কমার্স পরিচিতি ও মডেল | - | NCTB BOOK

  ই-কমার্স বা ইলেকট্রনিক কমার্স বলতে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিক্রি করাকে বোঝায় । তাই এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “E-commerce or electronic commerce is the buying and selling of products or services via the internet.”

ই-কমার্স শুভ সূচনা হয়েছিল মূলত ১৯৬০-এর দশকে। সে সময়ে ব্যবসায়ীরা আদিম কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক উপায়ে তাদের লেনদেন কার্যক্রম সম্পন্ন করত। ইলেকট্রনিক ডেটা ইন্টারচেঞ্জ (Electronic data interchange - EDI) করে তারা তাদের ব্যবসায়িক বিভিন্ন দলিলপত্র বা ডকুমেন্টস অন্যান্য মেশিনের সাথে শেয়ার করতো।

পরবর্তীতে আমেরিকার তৎকালীন মিলিটারিরা এ.আর.পি নেট তৈরি করে নিউক্লিয়ার আক্রমণের যাবতীয় ঘটনা ও তথ্যসমূহ প্রচার করতে শুরু করল। আর এই আবিষ্কারই আজকের ই-কমার্স তৈরির ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিল। উৎপত্তিগতভাবে ই-কমার্স হচ্ছে বৈদ্যুতিক পদ্ধতিতে ইলেকট্রনিক ডেটা ইন্টারচেঞ্জ (Electronic data interchange-EDI) এবং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (Electronic fund transfer-EFT) প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবসায়িক যাবতীয় কার্যক্রম বিশেষত লেনদেন সম্পন্ন করার একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। সাধারণত ইলেকট্রিক ডেটা ইন্টারচেঞ্জ হলো ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত বৈদ্যুতিক উপায়ে ব্যবসায়িক তথ্য লেনদেনের একটি প্রক্রিয়া।

▪️১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের ধারণা পাওয়া যায়। ঐ সময়ে একটি প্রতিরক্ষা বিভাগীয় সংস্থা কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং গবেষণায় সর্বোচ্চ আর্থিক সহযোগিতা করেছিল।

▪️১৯৯০ সালের দিকে www-এর কোনো প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই ইন্টারনেট যুগের সমাপ্তি ঘটতে পারত। এ সময়ে Www-এর প্রয়োজনীয়তা লক্ষ করা যায়। কেননা এই ওয়েব বিভিন্ন মাধ্যম তথা রেডিও, টিভি, ইত্যাদির ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের গতি বাড়িয়ে দেয়।

▪️ পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থার মধ্যে তথ্য বিনিময়ের বিন্যাস সংজ্ঞায়িত করার জন্য মেটা মার্ক আপ ল্যাঙ্গুয়েজ (এক্স এম এল) খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেননা ওয়েব সেবা কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য এক্স. এম. এল. অপরিহার্য হয়ে ওঠে। আর এ সময়ে অনেকেই মনে করেছিলেন যে, এই এক্স. এম. এল. বা ওয়েব সেবা আগামীতে ই-কমার্স হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।

▪️১৯৯২ সালে ওয়েব ব্রাউজারের উন্নয়ন ঘটে। এ সময়ে ডাউনলোডের বিষয়টি নজরে আসে। পরবর্তীতে ই-কমার্সের বাস্তব রূপ চিহ্নিত করতে ন্যাপস্টারের উন্নয়ন ঘটে। এই ন্যাপস্টারের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিভিন্ন গানের ফাইল শেয়ার করা হতো। অর্থাৎ, বিনামূল্যে মানুষ তার পছন্দের গানগুলো ডাউনলোড করতে পারত। 

▪️ ২০০০ সালে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। এরই মধ্যে ই-কমার্সও ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করতে থাকে।

বর্তমান শতাব্দির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যবসায় প্ল্যাটফর্ম হলো ই-কমার্স। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় এর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। B2C, B2B, C2C, C2B, G2B ই-কমার্স-এর যুগান্তকারী ব্যবসায়ের ধরন।

 

ই-বিজনেস-এর বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলি (Features & Function of E-business )

   ইলেকট্রনিক কমার্সকে সংক্ষেপে ই-কমার্স হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার কেনা-বেচাকে ই-কমার্স বলে। এ প্রসঙ্গে Kalakota P. T. Joseph বলেন, "E-commerce comprises core business processes of buying and selling goods, services and information over the internet." নিচে ই-বিজনেস-এর বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো হলো- 

১. সর্বব্যাপী (Ubiquitous) : ই-কমার্সের ব্যাপ্তি বা আওতা বিশ্বব্যাপী। ঘরে বসেই বিশ্বের যেকোনো দেশের মার্কেটে প্রবেশ করে পণ্য ক্রয় করা যায়।

২. বিশ্বব্যাপী পৌঁছানো (Global reach) : ই-বিজনেস এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম করে পণ্যের কেনা-বেচা করা যায়।

৩. সার্বজনীন মান ( Universal standard) : ই-বিজনেসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো সার্বজনীন এক্ষেত্রে একটা standard মান বজায় রাখার চেষ্টা করা যায়।

৪. আন্তঃযোগাযোগ (Interconnectivity) : ই-বিজনেস ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। এটি বর্তমান শতাব্দির ব্যবসায় সহজতর করার অন্যতম উপায়। 

৫. তথ্যের পর্যাপ্ততা (Information availability) : সব বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের অসংখ্য তথ্য পাওয়া যায় ই-বিজনেস-এ।

৬. প্রযুক্তিভিত্তিক (Techonology based) : ই-বিজনেস কার্যক্রম পুরোটাই প্রযুক্তি নির্ভর। ফান্ড ট্রান্সফারসহ পণ্যের অর্ডার গ্রহণ, পণ্য পছন্দ করা ইত্যাদি সব কিছু প্রযুক্তি তথা ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়ে থাকে ।

৬. ভার্চুয়াল যোগাযোগ (Virtual communication) : এক্ষেত্রে অনলাইন তথা ইন্টারনেটের মাধ্যমে একজন আরেকজনের সাথে সরাসরি যোগ করে থাকে।

৭. অনলাইন ক্রয়-বিক্রয় (Online purchase & selling) : ই-বিজনেস এ সব পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয় অনলাইনে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

৮. সম্পর্কভিত্তিক মার্কেটিং (Relationship marketing) : ই-বিজনেসের মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক তৈরি করা যায়। এর ফলে একে অপরের সাথে খুব আন্তরিকতার সাথে মিশে যেতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়।

কার্যাবলি : একটি প্রতিষ্ঠানকে ই-বিজনেস প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা কাজ করতে হয়। নিচে ই-বিজনেস- এর কার্যাবলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

১. অ্যাকাউন্টস ও বিলিং (Accounts and billing) : ই-বিজনেসে আর্থিক বিভিন্ন কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হয়। ইলেকট্রনিকভাবে অর্ডার গ্রহণ, বিল তৈরি, অর্থ আদান-প্রদান করা ই- বিজনেসের কাজ।

২. সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট (Supply chain management) : চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করা ই-বিজনেসের অন্যতম কাজ। প্রতিষ্ঠানের উচিত চাহিদা ও সরবরাহের উভয় প্রান্তে তথ্যের অবাধ ও স্পষ্ট প্রবাহ নিশ্চিত করা।

৩. সংগ্রহ/ক্রয় (Procurment): এক্ষেত্রে দুই ধরনের সিস্টেম আছে। যথা— ই-প্রোকিউরমেন্ট (E- procurement) এবং আই-প্রোকিউরমেন্ট (I-procurement)। ই-প্রোকিউরমেন্ট হলো অভ্যন্তরীণ ক্রয়ের জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক সিস্টেম। আর আই-প্রোকিউরমেন্ট হলো একটি ওয়েবভিত্তিক সিস্টেম, যা বিক্রেতাদের বাইরের সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত থেকে ক্রয় এবং অর্থ প্রদান স্বয়ংক্রিয়ভাবে করে।

৪. মানবসম্পদ (Human Resource ) : ইন্ট্রানেট ব্যবহার করে কর্মী তথ্যে অ্যাক্সেস করা যায়। কর্মীরা দরকার অনুযায়ী তথ্য ব্যবহার, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন বা রিপোর্ট তৈরি করতে পারে। এভাবে ই-বিজনেসে মানবসম্পদ সম্পর্কিত কার্যাবলি করা হয়।

৫. বিপণন (Marketing) : ই-বিজনেসে বিভিন্ন মেইল হাউজ, কল সেন্টার, ওয়েবসাইট ব্যবহার করে পণ্যের বিপণন করা হয়। এতে ক্রেতাদের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পণ্যের তথ্য চলে যায় এবং ক্রেতারা কিনতে আগ্রহী হয় ।

৬. ক্রেতা সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা (Customer relationship management) : ই-বিজনেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ক্রেতার সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করা। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পণ্যের সঠিক উপস্থাপন, দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, আসল পণ্য সরবরাহ প্রভৃতি কাজের মাধ্যমে ক্রেতার সাথে সুসম্পর্ক রাখা যায়।

common.content_added_and_updated_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion