নিত্যকর্ম ও যোগাসন (চতুর্থ অধ্যায়)

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - | NCTB BOOK

চতুর্থ অধ্যায়

নিত্যকর্ম ও যোগাসন

নিত্যকর্ম ও যোগাসন

নিত্যকর্ম হলো পরম পবিত্র কর্ম। নিত্যকর্ম অনুশীলন করলে যোগ, তপ, সাধনা, কাজ-কর্ম, উপভোগ, আনন্দ, স্ফূর্তি সবকিছুই ভালো লাগে এবং জাগতিক ও পারমার্থিক মঙ্গল লাভ হয়। তাই সকলেরই নিত্যকর্মগুলো নিয়মিত করা উচিত। আর শরীরই হচ্ছে ধর্ম-কর্মের মূল আধার শরীর আদ্যং - খদু ধর্মসাধন"। তাই শরীরকে নীরোগ ও মনকে শান্ত রাখার জন্য সকলেরই যোগাসন অনুশীলন করা কর্তব্য। যোগাসন বহু প্রকারের। সে সবের মধ্যে আমরা এ অধ্যায়ে গোমুখাসন, গান বন্ধাসন সম্পর্কে জ্ঞান ।

এ অধ্যারশেষে আমর

. নিত্যকর্ম অনুশীলনের প্রভাব বর্ণনা করতে পারব

• গোমুখাসনের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পাৱৰ

• গোমুখাসন অনুশীলন-পদ্ধতি বর্ণনা করতে পারব

- গোমুখাসন অনুশীলন ও এর প্রভাব বর্ণনা করতে পারব

• ভুজঙ্গাসনের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব।

• লগন অনুশীলন-পদ্ধতি বর্ণনা করতে পারব

 

 

80

হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

• ভূজঙ্গাসন অনুশীলন ও এর প্রভাব বর্ণনা করতে পারব

বজ্রাসনের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব

• বজ্রাসন অনুশীলন-পদ্ধতি বর্ণনা করতে পারব

• বর্গাসন অনুশীলন ও এর প্রভাব বর্ণনা করতে পারব। পাঠ ১ : নিত্যকর্ম অনুশীলনের প্রভাব

যাঁরা নিত্যকর্মের অনুশীলন করেন তাঁদের মন ধীর, স্থির ও শান্ত থাকে, শরীর সুস্থ ও কর্মঠ থাকে এবং তাঁদের জীবন শুদ্ধ, পবিত্র ও নির্মল হয়। নিত্যকর্মের ফলে কাজ করার একটি সুন্দর অভ্যাস গড়ে ওঠে। সব কাজ তাঁরা সঠিক সময়ে সঠিকভাবে করতে পারেন। কোনো কাজে তাঁদের অলসতা আসে না । কাজের প্রতি একটা উৎসাহ সৃষ্টি হয়। এর ফলে কাজটাও যেমন সুন্দর হয়, তেমনি সকল কাজে সফলতাও আসে। কবার বলে সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। অর্থাৎ সময়মতো কোনো কাজ না করলে, অসময়ে সেই কাজ করতে গেলে অনেক ঝামেলা হয়।

নিত্যকর্মের দ্বারা ততকর্মের ফল সর্বদাই প্রত্যক্ষ করা যায়। প্রত্যেক শুভকর্ম করার জন্য একটা সময় নির্ধারিত হয়ে যায়। নিত্যকর্ম সম্পাদনকারীদের ঘর-বাড়ি পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন, শুদ্ধ ও পবিত্র থাকে। ভোরে ঘুম ভাঙ্গতেই ব্রাহ্মমুহূর্তে গুপ্ত সংকল্প করে মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে শ্রদ্ধা-ভক্তি সহকারে ঈশ্বরকে ডাকলে আপসা দূর হয় এবং সমস্ত দিন সুন্দরভাবে কেটে যায়। প্রাতঃকালের আধ্যাত্বিক কর্মকাণ্ডের ফল দিনের যে-কোনো সময়ে অনুষ্ঠিত পারমার্থিক কর্মের ফল থেকে অনেক বেশি। প্রতিদিন গুরুজনকে নমস্কার করলে তাঁদের প্রতি কখনও খারাপ ব্যবহার, অসম্মান বা নিত্যকর্ম ও যোগাসন

অমর্যাদা করার সাহস হয় না। নমস্কার বিনম্রতার প্রতীক। যেখানে শ্রদ্ধা, ভক্তি ও সম্মানের ভাব থাকে সেখানে বিনম্রতার সৃষ্টি হয়। সেজন্য পিতা-মাতা, বিধান, বয়োবৃদ্ধ ও গুরুজনদের নিত্য নমস্কার করা উচিত।

প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা যোগব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে। সুতরাং নিয়মিত যোগাসন করলে শরীর হৃষ্ট-পুষ্ট, বলবান, শক্তিশালী, ওজস্বী ও তেজস্বী হয় এবং সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে করা যায়। মানুষমাত্রই শান্তির জন্য ঈশ্বরের উপাসনা করে। প্রতিদিন পূজার্চনা ও উপাসনাদি দ্বারা ভগবানের নাম উচ্চারণ এবং তাঁর উদ্দেশে প্রার্থনা জানানোর ফলে আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত হয়। এর ফলে ঈশ্বরকে লাভ করা যায়। কর্মে অনাসক্ত ব্যক্তির কোনো কর্মেই মন বসে না। তারা যা-কিছু করে তা বাধ্যতামূলক, সানন্দে করে না। তাই তারা জীবনে উন্নতি লাভ করতে পারে না। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত নিত্যকর্মের

অনুশীলন করা। নতুন শব্দ: ব্রাহ্মমুহূর্ত, আধ্যাত্মিক, পারমার্থিক, ওজস্বী, তেজস্বী, নিষ্কর্মা, বাধ্যতামূলক।

পাঠ ২ গোমুখাসনের ধারণা, অনুশীলন-পদ্ধতি ও প্রভাব

গোমুখাসনের ধারণা

এই আসনে অবস্থানকালে আসন অভ্যাসকারীর পায়ের অবস্থান গরুর

মুখের মতো হয় । তাই এ আসনের নাম গোমুখাসন

কর্মা-৬, হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি

হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

অনুশীলন-পদ্ধতি

প্রথমে দুই পা সামনের দিকে লম্বা করে ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসতে হবে। তারপর ডান পা হাঁটুতে ভেঙ্গে বাঁ পায়ের হাঁটুর ওপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে ডান পায়ের গোড়ালি বা নিতম্ব স্পর্শ করাতে হবে। বাঁ পা হাঁটুতে ভেঙ্গে বাঁ পায়ের গোড়ালি ডান নিতম্বের পাশে স্পর্শ করাতে হবে। এবার ডান হাত মাথার ওপর তুলে কনুইতে ভেঙ্গে ঘাড় বরাবর পিঠের ওপর দিয়ে নিচে নামাতে হবে। বাঁ হাত কনুইতে ভেঙ্গে পেছনে পিঠের ওপর দিয়ে ওপরের দিকে নিতে হবে। এবার দু-হাতের আঙ্গুলগুলো বড়শির মতো করে এক হাত দিয়ে অপর হাত ধরতে হবে। এ-সময় ঘাড় ও মেরুদণ্ড সোজা থাকবে। দৃষ্টি থাকবে সামনের দিকে । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এভাবে ৩০ সেকেন্ড থাকতে হবে। তারপর হাতদুটো ছেড়ে, পা-দুটো আগের মতো লম্বা করে সামনের দিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর ডানের জায়গায় বাঁ আর বাঁয়ের জায়গায় ডান করে অর্থাৎ হাত-পা বদল করে আসনটা আবার করতে হবে। এরপর ৩০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। এ রকম চারবার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ডান হাঁটু যখন বাঁ হাঁটুর ওপর থাকবে তখন ডান হাত ওপরে উঠবে। আর বাঁ হাঁটু যখন ডান হাঁটুর ওপর থাকবে তখন

বাঁ হাত ওপরে উঠবে।

একক কাজ: গোমুখাসনটি অনুশীলন করে দেখাও।

প্রভাব

গোমুখাসন নিয়মিত অনুশীলন করলে -

১. পায়ের পেশি নমনীয় হয়, পায়ের ব্যথা দূর হয়।

২. হাঁটুর বাত নিরাময় হয়।

৩. পিঠের মাংসপেশির ব্যথা দূর হয়।

৪. অসমান কাঁধ সমান হয়।

৫. কাঁধের সন্ধিস্থলের ব্যথা দূর হয়।

৬. মেরুদণ্ড নমনীয় হয়, বাকা মেরুদণ্ড সোজা হয়। ৭. পরিপাক যন্ত্রের গোলযোগ ও কোষ্ঠাবদ্ধতা দূর হয়

৮. হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।

৯. অনিদ্রা দূর হয়।

১০. মনের অস্থিরতা ও চঞ্চলতা দূর হয়, মন শান্ত থাকে

দলীয় কাজ: গোমুখাসন অনুশীলনের উপকারিতা লিখে একটি পোস্টার তৈরি কর।

নতুন শব্দ: গোমুখাসন, গোড়ালি, নিতম্ব, বাত, পেশি, পরিপাক যন্ত্র, নিরাময়, কোষ্ঠবদ্ধতা, নমনীয়, সন্ধিস্থল

।নিত্যকর্ম ও যোগাসন

পাঠ ৩ : ভুজঙ্গাসনের ধারণা, অনুশীলন-পদ্ধতি ও প্রভাব

ভুজঙ্গাসনের ধারণা

'ভুজঙ্গ' শব্দের অর্থ সাপ। এই আসনে অবস্থানকালে কোমর থেকে দেহের ওপরের অংশকে ওপরে তুলতে হয়। এ-সময় এই আসন অভ্যাসকারীকে বলাতোলা ভূভাগ বা সাপের মতো দেখায়। তাই এ আসনের নাম তুলাসন। একে সর্পাসনও বলা হয়।

অনুশীলন-পদ্ধতি

শরীরের সমস্ত মাংসপেশিকে শিথিল করে পা-দুটো জোড়া ও লম্বা করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে হবে । পারের আঙ্গুলগুলো মাটির সাথে লেগে থাকবে। হাঁটু, উরু ও গোড়ালি সোজা থাকবে। দুহাত কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙ্গে দু-হাতের তালু উপুড় করে পাঁজরের কাছে দু-পাশে মাটিতে রাখতে। হবে। এরপর হাতের ওপর অল্প ভর দিয়ে চিবুক ওপরে তুলে ঘাড় পেছন দিকে নিতে হবে এবং সঙ্গে-সঙ্গে পা থেকে নাভি পর্যন্ত শরীরের নিচের অংশ ভূমি-সংলগ্ন রেখে দেহের ওপরের অংশ হাতের ওপর বেশি জোর না দিয়ে শুধু বুক ও কোমরের ওপর জোর দিয়ে ওপরে তুলতে হবে। এ অবস্থায় সমস্ত শরীর শিছিল করে ৩০ সেকেন্ড থাকতে হবে। এরপর আস্তে-আস্তে পেট, বুক, বাড় ও চিবুক নামিয়ে ভূমিসংলগ্ন করতে হবে এবং ৩০ সেকেন্ড চিৎ হয়ে শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। এভাবে এই আসন ও শাসন চারবার অভ্যাস করতে হবে। এই আসন অভ্যাসকালে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে ।

একক কাজ। ভুজঙ্গাসনটি অনুশীলন করে দেখাও

88

হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

প্ৰতাৰ

জনসন নিয়মিত অনুশীলন করলে -

১. মেরুদণ্ড নমনীয় হয় ।

২. বাঁকা মেরুদণ্ড সোজা ও সরল হয়।

৩. মেরুদণ্ডের বাত সারে।

৪. পিঠের ও কোমরের পেশি মজবুত হয়, কোমরে ব্যথা হতে পারে না।

৫. স্নায়ুমণ্ডলী সঞ্জে হয় ।

৬. শরীরের নিস্তেজ ভাব দূর হয় ও নতুন শক্তি জ

৭. হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস সবল হয়।

৮. বুকের গঠন সুন্দর হয় এবং দেহের লাবণ্য বৃদ্ধি পায় ।

৯. যকৃৎ ও প্লীহার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, হজমশক্তি বাড়ে । ১০. অজীর্ণ, অব, অনু, গ্যাস্ট্রিক, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগে সুফল পাওয়া যায় ।

১১. যারা কোলকুঁজো তাদের বিশেষ উপকার হয়।

দলীয় কাজ: ভুজঙ্গাসন অনুশীলনে কী কী উপকার হয়, তার একটি তালিকা তৈরি কর

নতুন শব্দ। ভূজজ, চিবুক, পাঁজর, সংলগ্ন, নিস্তেজ, লাবণ্য, কোলকুঁজো, যকৃৎ, প্লীহা, অজীর্ণ, অথন ।

পাঠ ৪ : বন্ত্রাসনের ধারণা, অনুশীলন-পদ্ধতি ও প্রভাব

বন্থাসনের ধারণা

যোগশাস্ত্রমতে আসনটি অভ্যাসে দেহের নিম্নভাগের স্নায়ু ও পেশি বজ্রের মতো কঠিন, মজবুত ও দৃঢ় হয়। তাই আসনটির নাম বন্ধাসন। এটি খাওয়ার পরে করা একমাত্র আসন

অনুশীলন-পদ্ধতি

হাঁটু ভেঙ্গে পা-দুটো পেছন থেকে মুড়ে নিস্বের নিচে এমনভাবে রাখতে হবে, যাতে পোড়ালি দুটো বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকে এবং দুই পায়ের গোড়ালি নিতম্বের সঙ্গে লেগে থাকে। এ অবস্থায় দু-পায়ের বুড়ো আঙুল পরস্পরের সঙ্গে

লেগে থাকবে এবং কোমর, গ্রিবা ও মাথা সোজা থাকবে। দুই হাঁটু পরস্পরের সঙ্গে লেগে থাকবে । হাতের কনুই না ভেঙ্গে ডান হাত থাকবে ডান হাঁটুর ওপর, আর বাঁ হাত থাকবে বাঁ হাঁটুর ওপর। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এভাবে ৩০ সেকেন্ড বসতে হবে। তারপর ৩০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। এভাবে ৩/৪ বার অভ্যাস করতে হবে।

একক কাজ: বজ্রাসনটি অনুশীলন করে দেখাও ।

প্রভাব

বজ্রাসন নিয়মিত অনুশীলন করলে -

১. হাঁটু ও গোড়ালির গাঁটের বাতজনিত ব্যথা দূর হয়।

২. পায়ের পেশি ও স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় হয়।

৩. অক্ষুধা ও অনিদ্রা দূর হয়।

৪. মনের চঞ্চলতা দূর হয়।

৫. স্বাস্থ্য সুন্দর ও লাবণ্যময় হয়।

৬. পরিপূর্ণ আহারের পর এ আসনটি ৫ থেকে ১৫ মিনিট অভ্যাস করলে খাদ্যবস্তু সহজে

হজম হয় এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় ।

৭. বজ্রাসনে বসে চুল আঁচড়ালে সহজে চুল পাকে না বা পড়ে না

common.content_added_and_updated_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

অনুচ্ছেদটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও

সমীর বাবু নিয়মিত একটা আসন অনুশীলন করেন। আসনটি অনুশীলনের সময় তাকে হাঁটু ভেঙ্গে পা দুটো পেছন থেকে মুড়ে নিতম্বের নিচে রেখে বসতে হয়

সায়টিকা হয়
বাতের ব্যথা বৃদ্ধি পায়
হাঁটুর ব্যথা কমে
স্নায়ুজাল নিস্তেজ হয়
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion