৩.২ মুরগির পুষ্টি উপাদানের অভাব জনিত রোগের নাম, কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ অপুষ্টিজনিত রোগ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-১ দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | - | NCTB BOOK

৩.২ মুরগির পুষ্টি উপাদানের অভাব জনিত রোগের নাম, কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ অপুষ্টিজনিত রোগ Name, cause, symptoms, treatment and prevention of malnutrition in chickens :

খাদ্যের যেকোনো এক বা একাধিক খাদ্যোপাদানের ঘাটতির কারণে লেয়ার মুরগির বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যাহত হয়, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। নিচের লেয়ারে বিভিন্ন ভিটামিনসমূহের অভাবজনিত রোগ, তাদের চিকিৎসা ও প্রতিকারের বর্ণনা দেওয়া হলোঃ

 

common.content_added_and_updated_by

৩.২.১ ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ

৩.২.১ ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ: 

                  (ক) ভিটামিন 'এ' এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin A deficiency disease)

কতদিন পর্যন্ত মুরগিগুলো এই ভিটামিনের অভাবে ভুগছে তার উপর ভিত্তি করে ভিটামিন-‘এ' এর অভাবে সৃষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায়। বয়স্ক মুরগিতে লক্ষণ দেখা দিতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। কিন্তু মুরগিতে ২/৩ সপ্তাহে মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। ভিটামিন-‘এ' এর অভাবজনিত লক্ষণগুলো অবস্থা ও বয়স ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • চোখের দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পায়, চোখের পাতা ফুলে যায় । 
  • নাক ও চোখ দিয়ে আঠার মতো জলীয় পদার্থ বের হয় এবং রাতকানা রোগ হয়। 
  • পায়ের হাঁটু ও চামড়ার হলুদ রং ফ্যাকাশে হয়ে যেতে থাকে । 
  • খাবার গ্রহণে আগ্রহ কমে যায় ও পালকের চাকচিক্য কমে যেতে পারে। 
  • মাথার ঝুঁটি, গলার ফুল নীলাভ ও শুষ্ক হয়। 
  • ঝুঁটি শুষ্ক ও ফ্যাঁকাশে হয়ে যায় । 
  • বাচ্চার শারীরিক বৃদ্ধি কমে যায় ।

অভাব নিরূপণ:

  • খাদ্যে ভিটামিন-এ'এর পরিমাণ সঠিক আছে কিনা তার রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা। 
  • রক্তের সিরামে ভিটামিন এর পরিমাণ নির্ণয় করা । 
  • চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায় কিনা তা লক্ষ্য করার মাধ্যমে এই ভিটামিনের অভাবজনিত অবস্থা নিরূপণ করা যায় ।

প্রতিকার ও চিকিৎসা: 

খাদ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করা প্রয়োজন। শাকসবজি, ভুট্টা, গম, ছোট মাছ, ফলমূল, ফলমূলের খোসা, হাঙ্গর মাছের তেল খাওয়ালে ভিটামিন-এ' এর অভাব দূর হয়। লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিদিন বাজারে প্রাপ্ত ভিটামিন এ.ডি.ই. দ্রবণ প্রস্তুতকারকের নির্দেশমত খাদ্য বা পানির সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ করতে হবে।

 

(খ) ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin D deficiency disease)

শরীরের হাড় এবং ডিমের খোসার গঠনের জন্য অর্থাৎ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস-এর কার্যকারিতার জন্য এই ভিটামিন অত্যন্ত জরুরি। সালফার জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে বা খাবার দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করলে ভিটামিন ডি নষ্ট হয়ে যায়, ফলে মুরগি খাবার হতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন ডি পায় না ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • পায়ের অস্থি নরম মোটা ও বাঁকা হয়ে যায়, ফলে মুরগি ঠিক মতো হাঁটতে পারে না। একে “রিকেট/অস্টিওম্যালেসিয়া” রোগ বলা হয়। 
  • ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে হাড় বাঁকা হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাবে।
  • ঠোঁট, হাড় ও পায়ের নখ নরম হয়ে যায়, ফলে মুরগি হাঁটুর উপর ভর দিয়ে চলে । 
  • দৈহিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে ও পাজর ফুলে যায় ।

রোগ নিরুপণ:

  • লক্ষণ দেখে রোগ নিরূপণ তথ্য ভিটামিন ডি এর অভাব বোঝা যায়। 
  • খাদ্যে ভিটামিনের পরিমাণ পরিমাপ করে এবং
  • সন্দেহজনক মুরগিকে যদি ভিটামিন ডি সরবরাহ করে ভালো ফল লাভ করা যায় তাহলে বুঝতে হবে মুরপিগুলো ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছিল।

সতর্কতা: অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন ডি খাদ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োগ করলে মুরগির কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ

  • খাদ্যে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন কোম্পানির এ.ডি.ই. প্ৰৰণ নির্দেশমত খাওয়াতে হবে।
  • যেহেতু ভিটামিন ডিএর সাথে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িত তাই একই সাথে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম এর প্রয়োজনীয় ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
  • খামারে ছোট বাচ্চাগুলোকে সম্ভব হলে দিনের কিছুটা সময় রোদ্রের সংস্পর্শে আসার সুযোগ দিলে এবং সকালবেলা মুরগির জন্য সূর্যালোকের ব্যবস্থা করলে ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত রোগের সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।

 

                    (গ) ভিটামিন ই এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin E deficiency disease)

ভিটামিন ই এর অভাবে মুরগির এনসেফালোমেলাসিয়া, মাসকুলার ডিসট্রোফি, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি রোগ হতে পারে। খাদ্যে অপর্যাপ্ত সেলিনিয়ামের উপস্থিতি, বিভিন্ন উপকরণের সঠিক অনুপাতে মিশ্রণ না করা, তৈল জাতীয় খাদ্যের অক্সিডেশন ইত্যাদির কারণে ভিটামিন-ই এর অভাব হতে পারে। 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • আক্রান্ত হাঁটতে পারে না, পা টান করে ছেড়ে দেয়। 
  • বাচ্চার মাথার বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয় ও জায়গাগুলো নরম হয়। এ রোগকে এনসেফালোমেলাসিয়া বলে ।
  • বুক ও উরুর মাংস শুকিয়ে যায়, একে মাসকুলার ডিসট্রোফি বলে। 
  • চামড়ার নিচে পানি জমার কারণে শরীর ফুলে যায়, একে 'অ্যাকজুডেটিভ ডায়াথেসিস'বলে ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

(ক) চিকিৎসার জন্য বাজারে প্রাপ্ত এ.ডি.ই. দ্রবণ প্রস্তুতকারকের নির্দেশমতো খাদ্য বা পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে । 

(খ) রোগ প্রতিরোধের জন্য সর্বদা খাদ্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মাত্রা বজায় রাখতে হবে। 

(গ) খাদ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ তৈল জাতীয় খাদ্য সরবরাহ রাখতে হবে। 

(ঘ) সংরক্ষিত খাদ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করতে হবে । 

(ঙ) প্রয়োজনীয় পরিমাণ খনিজ বিশেষত সেলেনিয়াম খাদ্যে মিশাতে হবে।

 

 

                    (ঘ) ভিটামিন কে এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin K deficiency disease)

এই ভিটামিনটি শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। এর অভাব হলে ঠোঁট কাটার সময় বা সামান্য আঘাতে অধিক রক্তক্ষরণ হতে পারে। আবার আমাশয় আক্রান্ত হলে পায়খানায় প্রচুর রক্ত দেখা যায়। খাদ্য ও পানিতে যদি সালফার জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয় তবে এই ভিটামিনটির মেটাবলিজমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে অন্ত্রের মধ্যে ভিটামিন কে উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়াসমূহ মরে যায়, ফলে দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হলে এ ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ সৃষ্টি হতে পারে। খাদ্যদ্রব্য অনেক দিন সংরক্ষণ করলেও খাদ্যের উপস্থিত এই ভিটামিনটি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় ।

অভাবজনিত লক্ষণ

  • এ ভিটামিনের ঘাটতির কারণে শরীরে কোথাও কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত হলে, রক্ত পড়া বন্ধ হয় না। ফলে মুরগির মৃত্যু ঘটে।
  •  ঠোঁট কাটার পর অধিক সময় ধরে রক্ত ক্ষরণ হয় ফলে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়ে মুরগি মরে যেতে পারে । 
  • চামড়া ও মাংস পেশিতে রক্তপাত হয়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

ক) ঠোঁট কাটার কয়েক দিন পূর্ব হতে খাদ্যে ভিটামিন-কে সরবরাহ করা প্রয়োজন । 

খ) রক্ত আমাশয় এর চিকিৎসা চলাকালেও অতিরিক্ত ভিটামিন কে সরবরাহ করা প্রয়োজন। 

গ) সবুজ ঘাস, মাছের গুঁড়া শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়ালে ঘাটতি দূর হয় । 

ঘ) চিকিৎসার জন্য খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সরবরাহ করতে হবে। 

ঙ) অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার সময় এবং তারপর কিছুদিন খাদ্য ভিটামিন কে সরবরাহ করতে হবে।

 

           (ঙ) ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন) এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin B, Thiamin deficiency disease)

পানিতে দ্রবণীয় এ ভিটামিনটির অভাবে খুব তাড়াতাড়ি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। খাদ্যে অধিক পরিমাণে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন বি-১ বিদ্যমান না থাকলে এর অভাবজনিত লক্ষণ দেখা যায় । 

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • অরুচি এবং খাদ্য গ্রহণে অনীহা । 
  • দৈহিক ওজন হ্রাস । 
  • উসকো খুসকো পালক । 
  • দুর্বলতা এবং হাঁটতে অনীহা । 
  • ঝিমানো ভাব ।
  • ঘাড় বাঁকানো বা ঘুরিয়ে উল্টোভাবে রাখা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায় । 
  • কখনও কখনও মুরগি ঘাড় পিছনের দিকে বাঁকা করে উর্ধ্বমুখী হয়ে অবস্থান করে । একে “স্টার গেজিং” বলে ।

রোগ নির্ণয়:

  • লক্ষণ অনুযায়ী ভিটামিন বি-১ এর অভাবে ভুগছে। 
  • আক্রান্ত মুরগির খাদ্যে ভিটামিন বি-১ এর পরিমাণ গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে এরা আসলে ভিটামিন বি-১ এর অভাবে ভুগছে কিনা ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

১) পানি বা খাবারে ভিটামিন বি-১ সরবরাহ করা। প্রথম কয়েক দিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থাৎ ১০-১৫ মিলিগ্রাম প্রতি কেজি খাবারের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। 

২) খুব অসুস্থ মুরগির জন্য আরও বেশি পরিমাণে ভিটামিন বি-১ খাবারে সরবরাহ করা প্রয়োজন । 

৩) এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিদিন খাবারের সাথে ভিটামিন বি-১ মিশিয়ে দিতে হবে।

 

            (চ) ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লাভিন) এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin B, Riboflavin deficiency disease)

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং খাবার পানির পিএইচ (অম্লত্ব) ভিটামিন বি-২ কে নষ্ট করে ফেলতে পারে । তাই খাদ্যে এর অভাব দেখা দিতে পারে । 

অভাবজনিত লক্ষণ :

বাচ্চা অবস্থায় প্রথম কয়েক সপ্তাহ ও ভিটামিনটির অভাব হলে মুরগির মধ্যে-

  • দৈহিক দুর্বলতা ও অপর্যাপ্ত বৃদ্ধি হয়। 
  • শুকিয়ে যায় এবং স্বাভাবিক পালক গজায় না । 
  • পাতলা পায়খানা হয় ।
  • তীব্র আক্রান্ত মুরগির পা অবশ হয়ে গিয়ে বুকের উপর ভর দিয়ে হাঁটে। 
  • প্রায় সময় ও ভিটামিনের অভাবে পায়ের অবশতাজনিত রোগ দেখা যায় যাকে ‘কার্ল-টো- প্যারালাইসিস’বলে । এক্ষেত্রে দুই পা দু'দিকে অর্থ্যাৎ সামনের দিকে এক পা চলে পিছনের দিকে চলে যায় ফলে পাগুলি অচল হয়ে যায় । তাই তারা হাঁটতে পারে না এবং না খেয়ে মৃত্যুবরণ করে।
  • ব্রিডার মুরগি হলে ডিম হতে বাচ্চা ফোটার হার কমে যায় এবং ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যায় ।

রোগ নিরূপণ :

 রোগের লক্ষণ দেখে ভিটামিন বি-২ সরবরাহ করলে যদি লক্ষণগুলো দ্রুত চলে যায় তবে বুঝতে হবে মুরগিগুলো ঐ ভিটামিনের অভাবে ভুগছিল ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

১) খাদ্যের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি-২ থাকা দরকার । 

২) মাঝে মাঝে পানিতে অন্যান্য ভিটামিনের সাথে ভিটামিন বি-২ সরবরাহ করা প্রয়োজন, যাতে এই ভিটামিনের অভাব না হয় । 

৩) আক্রান্ত মুরগিগুলোকে আলাদা ভাবে রেখে ভিটামিন বি-২ খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায় ।

 

(ছ) ভিটামিন বি-৬(পাইরিডক্সিন)এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin B Pyridoxine deficiency disease)

খাবারের মধ্যে অধিক পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় পদার্থ থাকলে এবং অনুযায়ী ভিটামিন বি-৬ এর স্বল্পতা থাকলে সাধারণত এ ভিটামিনটির অভাবজনিত সমস্যা দেখা যায় । কারণ এটি প্রোটিনের বিপাকে সাহায্য করে । 

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • দুর্বলতা, খাদ্য গ্রহণে অনীহা বা অরুচি, উসকো খুসকো পালক ইত্যাদি । 
  • দৈহিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত বা কম হওয়া । 
  • প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় । 
  • গুরুতর আক্রান্ত মুরগিগুলো উদ্দেশ্যহীনভাবে ছুটাছুটি করতে থাকে এবং সব শেষে খিঁচুনি দেখা যায় এবং মৃত্যু হয়।

রোগ নির্ণয়: 

খাদ্যে ভিটামিনের পরিমাণ নির্ণয় করে ও রোগের লক্ষণ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণার ভিত্তিতে ভিটামিন বি-৬ সরবরাহ করলে যদি ভালো ফল পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে ঐ ঝাঁকের মুরগিগুলি ভিটামিন বি-৬ এর অভাবে ভুগছিল ।

প্রতিকার ও চিকিৎসা: 

১) লক্ষণ প্রকাশ পেলে খাবারের বা পানির সাথে ভিটামিন বি-৬ সরবরাহ করে এ রোগের লক্ষণ প্রশমিত করা যায় । 

২) নিয়মিত পরিমাণমত ভিটামিন বি-৬ খাবারের সাথে সরবরাহ করলে এর অভাবজনিত লক্ষণ দেখা যায় না।

 

                                      (জ) বায়োটিন এর অভাবজনিত রোগ (Biotin deficiency disease)

অধিক পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ালে পরিপাকতন্ত্রের মধ্যে বায়োটিন সৃষ্টিকারি জীবাণু মরে গিয়ে কিংবা খাদ্যের মধ্যে বায়োটিনের পরিমাণ কম হলে অথবা খাদ্যে বায়োটিন নষ্টকারি কোনো পদার্থের উপস্থিতি থাকলে মুরগিতে এটার অভাবজনিত বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি হতে পারে। বাচ্চা মুরগির শরীরের অসাড়তার হাত থেকে রক্ষার জন্য এ ভিটামিনটির বিশেষ প্ৰয়োজন । 

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • পালক ভেঙে ঝুলে পড়া ও পরে হাড় বাঁকা হয়ে যেতে পারে। 
  • অনেক সময় চোখের পাতা বুজে থাকে বা চোখ বন্ধ হয়ে যায় । 
  • বাচ্চা মুরগির পায়ের নিচে, মুখের কোণায় এবং চোখের পাতায় কড়া পড়ে যেতে পারে। 
  • ডিমের ভিতরে বাচ্চা মরে যায়। 
  • ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার হার কমে যায় ৷

রোগ নির্ণয় : 

১) লক্ষণ দেখে বায়োটিন প্রয়োগের ফলে যদি চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে মুরগির বায়োটিনের অভাবে ভুগছিল । 

২) খাদ্যস্থিত বায়োটিনের পরিমাণ এবং রোগের লক্ষণ দেখে সমন্বয় করে ও রোগ নির্ণয় করা যায় ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

১) খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ বায়োটিন মিশাতে হবে। 

২) রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে পানিতে অতিরিক্ত বায়োটিন মিশাতে হবে।

৩)খাদ্য বা পানিতে অত্যধিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার পরিহার করতে হবে । 

৪) খাদ্যস্থিত বায়োটিনের পরিমাণ মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যাতে খাদ্যে বায়োটিনের অভাব না হয় ।

 

                  (ঝ) কলিন এর অভাবজনিত রোগ (Colin deficiency disease)

মোরগ-মুরগির শরীরে বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপে কলিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শারীরিক অসাড়তা দূর ও শরীরের বৃদ্ধির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি দেহের বিভিন্ন টিস্যু বা কলার গঠনে এবং স্নায়ুতন্ত্র সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । মুরগির খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণে কলিন সরবরাহ করা বাঞ্ছনীয় ।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • পায়ের হাড় নরম ও বাঁকা হয়ে মুরগি অসাড় হয়ে যায় । 
  •  দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে । 
  • ব্রিডার মুরগির কলিজায় অতিরিক্ত চর্বি ও রক্তক্ষরণজনিত লক্ষণ দেখা দেয় ৷ 
  • ব্রিডার মুরগির মৃত্যুর হার বেড়ে যায়, পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে যায় ফলে ডিম পাড়াও কমে যায় ।

রোগ নির্ণয় 

লক্ষণ দেখে এবং পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। এছাড়াও খাদ্যস্থিত কলিন বৃদ্ধি করে যদি ফল পাওয়া যায় তবে ধরতে হবে কলিনের অভাব ছিল। 

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণ সয়াবিন মিল, গম ভাঙা, ফিস মিল ইত্যাদি থাকায় মোরগ-মুরগিতে কলিনের অভাব সাধারণত হয় না। কারণ সয়াবিন মিল ও ফিসমিলে প্রচুর পরিমাণে কলিন থাকে। বাজারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যে কলিন বা কলিন ক্লোরাইড পাওয়া যায়, তা প্রয়োজন মত খাবারে মিশিয়ে দিতে হবে। তবেই কলিনের অভাজনিত রোগ প্রতিরোধ সম্ভব ।

 

(ঞ) ভিটামিন বি ১২ (সায়ানো-কোবালামিন) এর অভাবজনিত রোগ Vitamin B12 (cvano-cobalamin) deficiency disease

শরীরের কোষের নিউক্লিক অ্যাসিড তৈরিতে, শর্করা ও চর্বির বিপাকীয় প্রকিয়ায় ভিটামিন বি-১২ সাহায্য করে । তন্ত্রের বিভিন্ন জীবাণু এই ভিটামিনটি তৈরি করে বিধায় এই ভিটামিনটির অভাবজনিত রোগ খুব কম দেখা দেয় এবং খাদ্যে এর প্রয়োজন অত্যন্ত নগণ্য। লিটারে পালিত মোরগ-মুরগির এই ভিটামিনের অভাব হওয়ায় সম্ভাবনা কম। যদি মোরগ-মুরগিকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত অত্যধিক পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয় তবে এই ভিটামিনের অভাবজনিত রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে । 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • দৈহিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় । 
  • মৃত্যুর হার বেড়ে যায় এবং ডিম থেকে ডিম ফোটার হার কমে যায় । 
  • ডিমের মধ্যে বাচ্চার মৃত্যু ঘটতে পারে ।

রোগ নির্ণয় : 

অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের ইতিহাস, লক্ষণ ইত্যাদি দেখে ভিটামিন বি-১২ দিয়ে চিকিৎসা দিলে যদি ভালো ফল পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে মুরগিতে ভিটামিন বি-১২ এর অভাব ছিল ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ

১) লক্ষণ দেখা দিলে পানি বা খাবারের সাথে ভিটামিন বি-১২ সরবরাহ করতে হবে। 

২) সুস্থ অবস্থায় মাঝে মাঝে পানির সাথে ভিটামিন সরবরাহ করতে হবে।

 

          (ট) ভিটামিন সি এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin C deficiency disease)

স্ট্রেস বা পীড়ন প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর উপাদান হিসেবে ভিটামিন সি ব্যবহার হয়ে থাকে। মোরগ-মুরগি ভিটামিন সি যথেষ্ট পরিমাণে নিজেরাই উৎপাদন করতে পারে। দৈহিক বৃদ্ধি, বীর্য উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন রকম বিষক্রিয়া, বিশেষত কিছু খনিজ লবণের বিষক্রিয়ার হাত থেকে মোরগ-মুরগিকে রক্ষা করার ক্ষমতা ভিটামিন সি এর রয়েছে। খাদ্যে ভিটামিন সি এর অভাব থাকলে বা মোরগ-মুরগি অত্যধিক গরম আবহাওয়ায় থাকলে বা পীড়ন (স্ট্রেস) সৃষ্টি হলে মোরগ-মুরগির ভিটামিন সি এর অভাব দেখা দিতে পারে। 

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় । 
  • দৈহিক বৃদ্ধির হার কমে যায় ৷ 
  • খাদ্য হজম কম হয়।
  • পীড়নের মধ্যে পড়লে সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে অর্থাৎ পীড়ন সহ্য করার ক্ষমতা কমে যায় 
  • মোরগ-মুরগির বিশেষত মোরগের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:

  • খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি মেশাতে হবে। 
  • মোরগ-মুরগির ঘরের মধ্যে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • পীড়ন হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে পানির সাথে অতিরিক্ত ভিটামিন সি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। 
  • ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে ও পরে কয়েকদিন ভিটামিন সি সরবরাহ করতে হবে।

 

 

 

common.content_added_by

৩.২.২ খনিজ পদার্থের অভাবজনিত রোগ

৩.২.২ খনিজ পদার্থের অভাবজনিত রোগ (Mineral deficiency disease) 

(ক) ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর অভাবজনিত রোগ Diseases due to deficiency of calcium and phosphorus

আমিষ, শ্বেতসার, চর্বি এবং ভিটামিনের মতো পাখির খাদ্যে খনিজ পদার্থের একান্ত প্রয়োজন। পাখির দৈহিক বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য রক্ষা এবং প্রজননের জন্য খনিজ পদার্থ অত্যাবশ্যক। তবে অধিক পরিমাণে খনিজ পদার্থ বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে । তাই পরিমিত পরিমাণ খনিজ পদার্থ খাদ্যের সাথে সরবরাহ করতে হয়। 

কাজ:

  • পাখি/মুরগির দেহের অস্থি গঠন, ডিমের খোসা তৈরিতে খনিজ পদার্থ অত্যাবশ্যক। 
  • দেহের অম্ল-ক্ষারত্ব সমতা রক্ষা করে । 
  • খনিজ শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাদ্যে বিপাকে সাহায্যে করে ।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • ঠোঁট নরম ও বাঁকা হয়। 
  • ডিমের খোসা নরম ও পাতলা হয় 
  • খোসা ছাড়া ডিম দেয়। 
  • অস্থির গঠন ঠিক মতো হয় না। 
  • রক্ত জমাট বাঁধে না। 
  • রিকেট রোগ ও কেজ লেয়ার ফ্যাটিগ রোগ হয়। 
  • বাচ্চা ফোটার হার কমে যায়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:

  • মাছের গুঁড়া, ঝিনুক, হাড়, দানা শস্য, পালং শাক ইত্যাদি মুরগির খাদ্যে সরবরাহ করলে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায় ।
  • মুরগির খাদ্যের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত হবে বাচ্চা মুরগিতে ২.২ঃ১। 
  • মুরগির খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত হবে- বাড়ন্ত মুরগিতে ২.৫ঃ১ । 
  • মুরগির খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত হবে ডিমপাড়া মুরগিতে ৯৪১।

 

(খ) সোডিয়াম এর অভাবজনিত রোগ (Diseases due to deficiency of Sodium) 

সোডিয়ামের কাজঃ

  • দেহের অম্ল-ক্ষারত্ব সমতা রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত জরুরি। 
  • অস্থি গঠন করে ।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমত হয় না । 
  • ক্যানাবলিজম রোগ হয় । 
  • হাড় নরম হয়। রক্ত পাতলা হয় । 
  • ডি-হাইড্রেশন দেখা দেয় ও মৃত্যু ঘটে।

প্রতিকার ও চিকিৎসা: খাদ্যে সাধারণ লবণ সরবরাহ করে এর অভাব দূর করা যায়।

 

(গ) জিংক এর অভাবজনিত রোগ (Diseases due to deficiency of Zinc ) 

জিংকের কাজঃ

  • পাখির দৈহিক বৃদ্ধি, পালক গজানো ও ডিম উৎপাদনের জন্য জিংক প্রয়োজন । 
  • অস্থির গঠনে জিংক প্ৰয়োজন ।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমত হয় না । 
  • পালক কম গজায় ও পায়ের চামড়া উঠে যায় । 
  • পায়ের হাড় খাটো ও মোটা হয় । 
  • মুরগি ঠোকরা ঠুকরি করে ।

প্রতিকার ও চিকিৎসা:

  • মুরগির খাদ্যে জিংকের বা জিংক সমৃদ্ধ উপকরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে ।

 

ঘ) সেলেনিয়াম এর অভাবজনিত রোগ (Diseases due to deficiency of Selenium) 

সেলেনিয়ামের কাজঃ

  • সেলেনিয়াম হচ্ছে গ্লুটাথায়োন পারোক্সিডেজ ( Glutathion Peroxidase) নামক এনজাইমের অংশ যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • ডিম বসানোর ৪র্থ দিনে ভ্রুণের মৃত্যু হয়। 
  • চামড়ার নিচে পানি জমে । 
  • দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না ৷
  • রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ।

প্রতিকার ও চিকিৎসা:

  • ছোলা জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে বা খাদ্যে সেলেনিয়াম যুক্ত করলে এর অভাব দূর হয় ।

 

ঙ) লৌহ ও কপার এর অভাবজনিত রোগ (Diseases due to deficiency of Iron and Cupper)

অভাবজনিত লক্ষণ

  • রক্তশূণ্যতা বা অ্যানিমিয়া রোগ হয় । 
  • লাল পালক এর রং ফ্যাকাশে হয় । 
  • স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ।

প্রতিকার ও চিকিৎসাঃ 

শাকসবজি, ঘাস, মাছের গুঁড়া ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। খাদ্যে ফেরাস সালফেট ও কপার সালফেট সংযোজন করতে হবে।

 

 

 

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion