৩.৩ লেয়ার মুরগির টিকাদান কর্মসূচি

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-১ দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | - | NCTB BOOK

৩.৩ লেয়ার মুরগির টিকাদান কর্মসূচি (Laver Chicken Vaccination Program):

টিকা বীজ হচ্ছে রোগের প্রতিরোধক যা রোগের জীবাণু বা জীবাণুর অ্যান্ট্রিজেনিক উপকরণ দ্বারা তৈরি করা হয়। পাখির দেহের ভিতর রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য টিকাবীজ প্রয়োগ করতে হয়। টিকা বীজ প্রয়োগের ফলে দেহের ভিতর রক্ত বা রক্তরসে একপ্রকার ইমিউনোগ্লোবিউলিন নামক আমিষ পদার্থ তৈরি হয়, যাকে অ্যান্টিবডি বলা হয়। এ অ্যান্টিবডিই হচ্ছে রোগ প্রতিরোধক পদার্থ। এজন্য কৃত্রিম উপায়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষে সুনির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে টিকা প্রদানের যে সিডিউল তৈরি করা হয় তাই টিকাদান কর্মসূচি ।

 

 

common.content_added_by

৩.৩.১ ভ্যাকসিন/ টিকা

৩.৩.১ ভ্যাকসিন/ টিকা 

জীবিত বা মৃত বা অর্ধমৃত অনুজীব বা অনুজীব নিঃসৃত বিষ বা এনজাইম যা শরীরে প্রবেশ করানোর পর নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে তাই ভ্যাকসিন। কৃত্রিম উপায়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পদ্ধতিকে ভ্যাকসিনেশন বলে। ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা হয়।

 

common.content_added_by

৩.৩.২ ভ্যাকসিনেশনের নিয়মাবলী

৩.৩.২ ভ্যাকসিনেশনের নিয়মাবলী:

  • সঠিক মান ও জাতের ভ্যাকসিন নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
  • যে ভ্যাকসিন যে বয়সে দেয়ার নিয়ম সে বয়সেই দিতে হবে। 
  • ভিন্ন ভিন্ন মোড়কে/ বোতলে তৈরি দুই বা ততোধিক ভ্যাকসিন এক সাথে দেয়া যাবে না । 
  • ভ্যাকসিন গুলানো, মাত্রা ও প্রয়োগ করতে প্রস্তুতকারকের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। 
  • প্রস্তুতকারকের নির্দেশ অনুযায়ী ভ্যাকসিন রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • ভ্যাকসিন গুলানোর সময় পরিশ্রুত পানি ব্যবহার করতে হবে। 
  • ভ্যাকসিন প্রয়োগের সরঞ্জামাদি কোনক্রমেই কোনো রাসায়নিক বস্তু/ওষুধ/জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করা যাবে না। 
  • পানিতে ফুটিয়ে সরঞ্জামাদি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 
  • রোগাক্রান্ত বা পীড়ন অবস্থায় ভ্যাকসিন দেয়া যাবে না । 
  • ভাইরাল ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় গুলানো ভ্যাকসিন ঠান্ডা স্থানে রেখে প্রয়োগ করতে হবে ।
  • ভ্যাকসিন প্রয়োগের তিন দিন পূর্বে থেকে তিন দিন পর পর্যন্ত প্রতি ৫ লিটার পানিতে ১ গ্রাম করে ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ডব্লিউ.এস. মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
  • গুলানো ভ্যাকসিন ১-২ ঘন্টা সময়ের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে। 
  • ভোরবেলা অথবা বিকাল বেলা অথবা রাত্রে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে । 
  • একটি ঘরের সকল পাখিকে একই সময়ে ভ্যাকসিন দিতে হবে।
  • খাবার পানির মাধ্যমে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে পানিতে যাতে ক্লোরিন না থাকে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
  • ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর ভ্যাকসিনের ভায়াল মাটির গভীর গর্তে পুঁতে রাখতে হবে অথবা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে হবে।
  • ভ্যাকসিন অবশ্যই থার্মোফ্লাঙ্কের মধ্যে বরফ দিয়ে তার মধ্যে পরিবহন করতে হবে।

 

 

 

common.content_added_by

৩.৩.৩ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার কারণ

৩.৩.৩ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার কারণ The reason for the loss of effectiveness of the vaccine 

বিভিন্ন কারণে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেমন-

  • ভ্যাকসিনেশনে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, নিডল, ড্রপার যদি জীবাণুমুক্ত না হয়। 
  • ভ্যাকসিনের মাত্রা যদি নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে খুব কম বা খুব বেশি হয়।
  • ক্লোরিনযুক্ত পানিতে ভ্যাকসিন গুলানো হলে । 
  • নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের জন্য নির্দিষ্ট ডায়লুয়েন্ট (পানি) ব্যবহার না করলে ।
  • ভ্যাকসিন যদি শরীরের মধ্যে ঠিকভাবে প্রবেশ না করে । 
  • বুস্টার ডোজ না দিলে ।
  • মেয়াদ উত্তীর্ণ ভ্যাকসিন ব্যবহার করলে। 
  • নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ বা পরিবহন না করলে। 
  • রোগাক্রান্ত পাখিতে ভ্যাকসিন প্রদান করলে।
  • খাদ্যে মাইকো টক্সিন এবং আফলা টক্সিন থাকলে । 
  • পীড়নকালে ভ্যাকসিন দিলে । 
  • জীবিত জীবাণু দ্বারা তৈরি ভ্যাকসিনের জীবাণুর মৃত্যু ঘটলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় ।

 

 

common.content_added_by

৩.৩.৪ ভ্যাকসিনেশনের বিভিন্ন উপায়

৩.৩.৪ ভ্যাকসিনেশনের বিভিন্ন উপায় (Different ways of vaccination) 

দু'টি পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যায়- 

ক) একক ভ্যাকসিনেশন 

(খ) সম্মিলিত ভ্যাকসিনেশন।

(ক) একক ভ্যাকসিনেশনের বিভিন্ন উপায় 

১. চামড়ার নিচে বা মাংসপেশিতে: সাধারণত ঘাড়ের বা পাখার চামড়ার নিচে এবং রানের বা বুকের মাংসে ইনজেকশনের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেয়া হয় । 

২. চোখ বা নাকের ছিদ্রের মাধ্যমে: নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের জন্য নির্দিষ্ট আকারের ড্রপারের সাহায্যে ১ চোখে বা নাকের এক ছিদ্র পথে ১ ফোঁটা ভ্যাকসিন দেয়া হয়। 

৩. ঠোঁট ডোবানোর মাধ্যমে: নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি দ্বারা ভ্যাকসিন গুলিয়ে তার মধ্যে নাকের ছিদ্র পর্যন্ত ঠোঁট ডুবিয়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। 

৪. ক্ষত তৈরির মাধ্যমে: রানের কোনো স্থানে কয়েকটি পালক উঠালে একটি ছোট ক্ষত তৈরি হয়। এই ক্ষতস্থানে ভ্যাকসিন মিশ্রিত পানি দ্বারা লেপে দিলে ভ্যাকসিনেশন হয়ে যায় ।

(খ) সম্মিলিত ভ্যাকসিনেশনের উপায় 

১.খাবার পানির সাথে: এই পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন ক্লোরিনমুক্ত পানি/পাতিত পানি/বৃষ্টির পানির সাথে মিশিয়ে ঐ পানি মুরগিকে পান করানো হয়। এ পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে-

  • পাখিকে ৩ ঘণ্টাকাল পানি না দিয়ে তৃষ্ণার্ত করে ভ্যাকসিন মিশ্রিত পানি দিতে হবে। 
  • ভ্যাকসিন মিশ্রিত পানি পাত্রে ২-৩ ঘণ্টা সময় থাকতে হবে।
  • ভ্যাকসিন ব্যবহারের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে মিশ্রিত করতে হবে। 
  • সকালে বা বিকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার সময় ভ্যাকসিন মিশ্রিত পানি দিতে হবে।

 

২. স্প্রে ভ্যাকসিনেশন 

পরিষ্কার, ক্লোরিন ও জীবাণুমুক্ত পানিতে/পাতিত পানিতে ভ্যাকসিন মিশিয়ে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে ৩-৩.৫ ফুট উপর থেকে বাচ্চার উপর স্প্রে করতে হবে। ভ্যাকসিন স্প্রে করার সময় দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে।

 

 

 

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion